The Mummy Tomb of the Dragon Emperor সিনেমার কিছু অংশের শুটিং
The Mummy Tomb of the Dragon Emperor সিনেমার কিছু অংশের শুটিং
চীনের প্রথম সম্রাট ‘কিন শি হুয়াং ডি’ মাত্র ১৩ বছর বয়সে কিন প্রদেশের রাজা হিসেবে সিংহাসনে পদার্পণ করেন। এর ২৫ বছর পর ২৪৬ খ্রিস্টপূর্বে তিনি প্রতিবেশী ছয়টি দেশ এবং সংযুক্ত চীন জয় করেন। সিংহাসন অভিগমনের অল্প কিছু সময় পর তিনি নিজেই তাঁর সমাধি তৈরি করেন এবংসমাধিতে তাঁর নিরাপত্তা এবং পরজন্মে শাসন করার লক্ষ্যে মাটির তৈরি বা টেরাকোটার একটি বিশাল এবং মানুষের মতো পূর্ণাকার সৈন্যবাহিনী তৈরি করেন। ৭ লক্ষেরও বেশি শ্রমিক খাঁটিয়ে ৩৬ বছর সময় ধরে তিনি ৮ হাজার সৈনিকের একটি সৈন্যদল নির্মান করেন।
সম্রাটের রাজধানী শিয়েনিয়েং ছিল একটি মস্ত বড় মহানগরী। এই মহানগরীতে তিনি আনুমানিক ২৭০ টি প্রাসাদ গড়ে তুলে ছিলেন, যার মধ্যে মাত্র একটি এখন টিকে রয়েছে বলে জানা যায়। যখনই হুয়াং ডি কোন প্রতিপক্ষ রাষ্ট্রকে পরাজিত করতো তখন সেই পরাজিত রাষ্ট্রের শাসনকারী পরিবারকে এনে তার রাজধানী তে অবস্থিত ঐ পরাজিত পরিবারের প্রাসাদের আদলে তৈরি প্রাসাদে থাকতে দিতেন।
প্রায় ২০০ বছর যাবত চীনের বিভিন্ন রাজ্য গুলোর মধ্যে যুদ্ধ বিগ্রহ লেগেছিল। চিন শি হুয়াংদি প্রথম পুরো চীন কে একত্রিত করেন এবং একত্রিত চীন কে কেন্দ্রীয় ভাবে শাসন করেন। তাঁর শাসনামলের স্থিরতার কারণে চীনে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অনেক উন্নতি হয়। এছাড়াও হস্তলিপির প্রচলন, রাস্তা নির্মাণ ও খাল খনন, ধাতুবিদ্যার উন্নয়ন, পরিমাপের একক আবিষ্কার এবং চীনের গ্রেট ওয়াল তৈরির মত কাজও হয় তাঁর শাসনামলে। কিন্তু যাই হোক, চিন শি হুয়াংদি তাঁর নির্মমতা ও নির্দয়তার জন্যও অনেক পরিচিত। জানা যায়, যে সকল পণ্ডিতদের সাথে তাঁর মত মিল তো না তাদেরকে অবলীলায় হত্যা করতেন তিনি। এছাড়াও যে সকল সৈন্যদের সে বাধ্য করেছিল তাঁর জন্য প্রাসাদ এবং অন্যান্য স্থাপনা তৈরি করতে তাদের জীবনের প্রতিও তাঁর কোন মায়া ছিলনা। এমনকি তাঁর সমাধিস্থল নির্মাণ করতে গিয়েও অনেক সৈন্য মারা গিয়েছিল। আরও জানা যায় যে, সমাধিস্থল নির্মাণ করেছে এমন অনেক সৈন্যকে তিনি নিজেও মেরে ফেলেছিলেন সমাধি এর অবস্থান গোপন রাখার জন্য এবং সেখানে লুকিয়ে রাখা গুপ্তধনের কথা লুকিয়ে রাখার জন্য।
চিন শি হুয়াংদির সমাধির পাশে যে সৈন্যদল সাজানো তাতে যে প্রমাণ সাইজের যোদ্ধা, তীরন্দাজ, ঘোড়া এবং রথ সাজানো আছে তা মূলত রাখা হয়েছিল চিন শি কে মৃত্যু পরবর্তী জীবনে শত্রুদের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য। জীবিত অবস্থায় তিনি অনেক রাজ্যের লোকের সাথে যুদ্ধ করেছিলেন এবং তাঁর অনেক শত্রু তৈরি হয়েছিল। তাই তাঁর ধারণা ছিল যে তিনি মারা যাওয়ার পর তাঁর শত্রুরা প্রতিশোধ নেয়ার জন্য তাঁর উপর আক্রমণ করবে। তাই তিনি জীবদ্দশায় অমরত্ব লাভ করার অনেক পথ খুঁজেছেন এবং শেষ পর্যন্ত তাতে বার্থ হয়ে নিজের সমাধিকে পাহারা দেয়ার জন্য এতো বড় সৈন্য দল নির্মাণ করেছিলেন।
পোড়া মাটির সৈন্য পাওয়া খন্দ গুলো খনন করার সময় প্রত্নতাত্ত্বিকরা প্রায় ৪০,০০০ ব্রোঞ্জের অস্ত্র উদ্ধার করেন যার মধ্যে আড়ধনু, বাণ, কুড়াল এবং বর্শার মত অস্ত্র উল্লেখযোগ্য ছিল। অস্ত্রগুলো বানানোর ২,০০০ বছরেরও বেশি সময় পর খুঁজে পাওয়া গেলেও, তাদের অবস্থা খুব ভালো ছিল কারণ সেগুলোতে ক্রোমিয়ামের প্রলেপ দেয়া ছিল যা অত্যন্ত আধুনিক একটা পদ্ধতি। ধাতুর প্রলেপ দেয়ার এই পদ্ধতি প্রথম ব্যবহার করে জার্মানি ১৯৩৭ সালে, তারপর আমেরিকা ১৯৫০ সালে। এর থেকেই বুঝা যায় ঐ সময় চীন ধাতুবিদ্যায় কতটা এগিয়ে ছিল।
আবিষ্কারের পর ঐ সমাধিস্থলে এই পর্যন্ত মোট ৮,০০০ সৈন্য, ১৩০ টি রথ ও ৬৭০ টি ঘোড়ার মূর্তি খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। সৈন্য দের গড় উচ্চতা ১.৯০ মিটার এবং সবচেয়ে খাটো সৈন্যের মূর্তির উচ্চতা ১.৭০ মিটার। কিন্তু সেখানে এইগুলো ছাড়াও আরও পাওয়া গিয়েছে পোড়া মাটির গায়ক, কসরত কারী, রক্ষিতা সহ কিছু পাখি যেমন: জলকুক্কুট, সারস ও পাতিহাঁস। ধারণা করা হয়, মৃত্যুর পরও চিন শি হুয়াংদি ঠিক তেমন বিলাসবহুল জীবনই চেয়েছিলেন যেমন টা তিনি কাটিয়েছিলেন জীবদ্দশায়। এইজন্যই জীবদ্দশায় তাঁর প্রাসাদ ও প্রাসাদের ভেতরের জিনিসপত্র ও মানুষের আদলেই গড়ে তুলে ছিলেন তাঁর সমাধিস্থল। কিন্তু সেই সমাধিস্থলের কাজ কখনও পুরোপুরি শেষ হয়নি। এমনকি তাঁর মৃত্যুর ৪ বছর পর নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছিল যখন হান সাম্রাজ্য শুরু হয়। প্রায় ৪০ বছর সময় নিয়ে নির্মিত এই পোড়া মাটির যোদ্ধাদের তৈরি করেছিল ৭০০,০০০ কর্মী।
মজার বিষয় হল এতো সংখ্যক মূর্তি পাওয়া গেলেও কোন একজন সৈন্যের চেহারার সাথে আরেকজন সৈন্যের চেহারার কোন মিল পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ এই পর্যন্ত যে ৮,০০০ পোড়া মাটির যোদ্ধা পাওয়া গিয়েছে তাদের সবার মুখের আদল ভিন্ন। এমনকি তাদের বয়স, চুলের ধরণ, মুখের অভিব্যক্তিও ভিন্ন ভিন্ন। কারো চেহারা শান্ত তো কারো চেহারা রাগান্বিত যেন এখনই যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে প্রস্তুত। এমনকি সৈন্যদের পোশাক ও বর্মও ভিন্ন ভিন্ন। অশ্বারোহী সৈন্যদের পোশাক আর বর্ম একরকম আবার পদাতিক সৈন্যদের অন্যরকম। আবার কিছু কিছু সৈন্যের কোন বর্ম নেই। একেকটি মূর্তি বানানোর পর তাতে সেই মূর্তির কারিগরকে নিজের নামের ছাপ দিতে হতো যেন কোন ভুল হলে সেই কারিগরকে ধরে শাস্তি দেয়া যায়।
সব ঘোড়ার মূর্তিতেই শিকল পড়ানো। এ থেকে জানা যায় যে, শিকলের আবিষ্কার হয়েছিল চিন শাসনামলে। বৈদ্যুতিক মাইক্রোস্কোপের নিচে পরীক্ষা করে নিষ্পেষণ ও মসৃণ করার যে প্রমাণ পাওয়া যায় তা থেকে বুঝা যায় যে ঐ সময়ে লেদ মেশিনেরও ব্যবহার ছিল। পোড়া মাটির যোদ্ধাদের নিয়ে গবেষণা অনেক দূর এগিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত সম্রাটের মৃতদেহ যেখানে রয়েছে সেটি খনন করা সম্ভব হয়নি।
চিন শি হুয়াং ডি সিংহাসনে বসার অনেক আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিলেন তাঁর সমাধি কোথায় হবে। তিনি সিংহাসনে বসার পরই তাঁর সমাধিস্থলের নির্মাণ কাজ শুরু করার নির্দেশ দেন। বিশ্বাস করা হতো যে মৃত্যুর পর ঐ পোড়া মাটির সৈন্য গুলো জীবন্ত হয়ে উঠবে। হাজার হাজার বছর পরও সুসজ্জিত এই সৈন্যদল আমাদের মনে করিয়ে দেয় তাদের নির্মাণকারী শিল্পীদের নৈপুণ্য ও কারুকার্যের কথা।
প্রাচীন সভ্যতার অনন্য নিদর্শন এই টেরাকোটা সৈন্যবাহিনী নির্মাণের পর প্রায় ২,০০০ বছর কেটে গেছে এগুলোকে আবিষ্কার করতে। ১৯৭৪ সালের মার্চ মাসে চীনের রাজকীয় শহর জি’আন এর জিইয়াং অঞ্চলের কয়েকজন কৃষক কৃষিকাজের জন্য পানি উত্তোলনের আশায় শক্ত মাটির আবরণে আবৃত একটি জায়গায় এসে দাঁড়ায়। সেখানে তারা মাটির তৈরি হাত-পা এবং ব্রোঞ্জের তৈরি তীরের ফলার সন্ধান পায়। এরপর এই জায়গাটি খনন করে পূর্ণ আকারের বিশাল সেনাবাহিনীর কিছু অংশের সন্ধান পায় প্রত্নতাত্ত্বিকরা।
The Mummy Tomb of the Dragon Emperor সিনেমার কিছু অংশের শুটিং এখানে হয়েছিল ।
ঢাকা - কুম্নিং - সিয়ান সিয়াং ইয়াং (Xi'an Xianyang International Airport) পর্যন্ত আকাশ পথে গিয়ে টেক্সি নিয়ে লিংটন জেলার টেরাকোটা সৈন্যবাহিনীর দেখা পাবেন ।
যেখানে যান পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখুন ।
No comments