Header Ads

Header ADS

আড়িয়াল বিল আর মাওয়া ঘাট বাজেট ট্যুর



ঢাকার আশেপাশে একদিনের মধ্যে ঘুরে আসার জন্য হাতেগোনা কয়েকটা জায়গার মধ্যে আড়িয়াল বিল একদম উপরের দিকেই থাকবে। অনেকদিন ধরেই এই গ্রুপে বিভিন্ন পোস্ট দেখছিলাম,অবশেষে ঘুরে এলাম আড়িয়াল বিল+মাওয়া ঘাট।
আমরা গিয়েছিলাম মিরপুর থেকে, মিরপুর ১২ থেকে সরাসরি মাওয়াগামী স্বাধীন পরিবহণের বাস ছাড়ে, সকাল সাড়ে সাতটার দিকে মিরপুর ১০ নাম্বার ওভারব্রিজের নিচ থেকে আমরা উঠে যাই বাসে,
আমাদের ট্যুর প্ল্যান ছিলো প্রথমে আড়িয়াল বিল ঘুরে এরপর মাওয়া ঘাটে গিয়ে লাঞ্চ করা। সকালের দিকে জ্যাম অনেক কম থাকায় প্রায় দুই ঘন্টার মধ্যেই আমরা পৌঁছে যাই বেজগাও এ, বেজগাঁও ছাড়াও আপনারা শ্রীনগর বাসস্ট্যান্ডে নেমে যেতে পারেন, শ্রীনগর ছনবাড়ি/চৌরাস্তা নামতে পারেন,আরো অনেক ওয়ে আছে।
আমার কাছে বেজগাঁও নামাই সুবিধাজনক লেগেছে।
বেজগাঁও নামলেই অটোরিকশা-রিকশা-লেগুনা দাঁড়িয়ে আছে দেখবেন। অটোরিকশা দিয়ে যেতে হবে গাদিঘাট,যেখান থেকে মেইনলি বোট ভাড়া করবেন।
অটোরিকশায় গাদিঘাট যাওয়ার পথেই অটোর ড্রাইভার মামার সাথে কথা বলে জেনে নিলাম যে শ্যামসিদ্ধির মঠটা কোথায়,উনি বললো যাওয়ার পথেই পড়বে, ১০-১৫ মিনিট পরই মঠের পাশে চলে আসলাম,অটো সাইড করে রেখে ১৫ মিনিটের জন্য আমরা ঘুরে আসলাম মঠের ওখান থেকে, ঐতিহাসিক দিক থেকে অনেক সমৃদ্ধ এই মঠ, উপমহাদেশেরই সবচেয়ে উঁচু মঠ এটা, গুগুল করলে এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।

তারপর আবার অটোতে চলা শুরু, আরো প্রায় দশ-পনেরো মিনিট পর আমরা পৌঁছে গেলাম গাদিঘাটে, ওখানে নেমেই হালকা খাবার দাবার,পানি,কোল্ড ড্রিংকস কিনে নিলাম নৌকায় খাওয়ার জন্য,নৌকা ভাড়ার ক্ষেত্রে ওরা একদম সিন্ডিকেট করে ফেলেছে,তাই বাধ্য হয়েই একটু বেশি টাকা দিয়েই ভাড়া করতে হয়। একটা ট্রলার আমরা ভাড়া করি ঘন্টা ৪০০ টাকা রেটে তিন ঘন্টার জন্য।
প্রথমে কিছুক্ষণ মনে হবে খুবই নরমালই তো,একটু পরই বুঝবেন আড়িয়াল বিলেন আসল সৌন্দর্য, ঠান্ডা বাতাসের সাথে পরিষ্কার পানিতে পা ভিজিয়ে চলার সে কি আনন্দ :') আমরা আমাদের ইচ্ছামত বোটের ইঞ্জিন থামিয়ে আমাদের মতো করে উপভোগ করেছি, ওখানে একটা ছোটখাট চরের মতো আছে,ওখানেও কিছুক্ষণ থেকে আমরা আবার রওনা দেই, নৌকায় ফেরার পথেই যেনো যে জিনিসটার অভাব এতক্ষণ বোধ করছিলাম, হঠাত করেই চোখের সামনে ধরা দিলো,হালকা বৃষ্টি-ঠান্ডা বাতাসে আড়িয়াল বিলে ঘোরার যে কি মজা তা না গেলে বুঝবেন না।
গাদিঘাটে ব্যাক করে আমরা আমাদের প্ল্যান অনুযায়ী মাওয়া ঘাট যাওয়ার জন্য রওনা দেই।
গাদিঘাট থেকে মাওয়া আপনি দুইটা ওয়েতে যেতে পারবেন।এক হচ্ছে যেখানে বাস থেকে নেমেছিলেন, মানে বেজগাও,ওই পর্যন্ত অটোরিকশা দিয়ে এসে এরপর লেগুনা/বাসে করে মাওয়া চলে যাওয়া-খুব বেশিদূর না।
তবে আমরা সেকেন্ড অপশনটা বেছে নেই,আমরা গাদিঘাট থেকে সরাসরি একটা অটোরিকশা নিয়ে মাওয়া চলে যাই, যেহেতু অটোরিকশা হাইওয়ে দিয়ে চলেনা,তাই গ্রামের ভেতর দিয়ে দিয়ে মাওয়া যাওয়াটাও একটা বোনাস এক্সপেরিয়েন্স হিসেবে যোগ হয়।

মাওয়া ঘাট গিয়েই আমরা সরাসরি খাবার হোটেলে চলে যাই, এতক্ষণ ঘোরাঘুরিতে একেকজনের ক্ষুধা লেগেছিলো প্রচুর, নিজেরাই ইলিশ পছন্দ করে ভাজতে দিয়ে আমরা বসে পড়ি হোটেলে, তখন বৃষ্টি আরো একটু বেড়েছে, একটু পরেই চলে আসে গরম ভাত,লেজ+ডিম ভর্তা,বেগুন ভাজি, ইলিশ ভর্তা,আলুভর্তা আর সেই বিখ্যাত পদ্মার ইলিশ <3
খাওয়া দাওয়া শেষে চা খেয়ে আমরা উঠে পড়ি ঢাকার উদ্দেশ্যে,আবারো সেই স্বাধীন পরিবহণ।
সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা-আটটার মধ্যেই আমরা যার যার বাসায় পৌঁছে যাই। শেষ হয় একটা অসাধারণ দিনের।
তবে মাওয়াতে ইলিশ খাওয়া শেষে চাইলে স্পিডবোটে করে পদ্মাতে ঘুরে আসতে পারেন, পদ্মা সেতুর পাইলিং এর কাজ চলছে সেগুলো ঘুরে আসা যায় মাত্র ২০+২০=৪০ মিনিটে। তবুও আমাদের সবাই রাজি না থাকায় আমরা যাইনি,চাইলে এটাকেও প্ল্যানের অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন,স্পিডবোটে সবাইকেই লাইফ জ্যাকেট দিবে, সাঁতার জানুন বা না জানুন অবশ্যই লাইফ জ্যাকেট পড়ে নিবেন কারণ পদ্মা দেশের সবচেয়ে বেশি খরস্রোতা নদীর একটা।



এবার আসি পার পারসন খরচের ব্যাপারে,আমরা আটজন গিয়েছিলাম একসাথে-

মিরপুর ১০ থেকে বেজগাঁও-৯০ টাকা
বেজগাঁও থেকে গাদিঘাট অটো রিজার্ভ- (২২০ টাকা)(দামাদামি করে আরো কমাতে পারবেন)
২২০/৮= ৩০/-
বোটভাড়া (তিন ঘন্টা) -১২০০/৮ =১৫০ টাকা
গাদিঘাট থেকে মাওয়া ঘাট অটো রিজার্ভ- (৪০০ টাকা-এক্ষেত্রেও দামাদামিটা আপনার উপর,আরো কমেই যাওয়া পসিবল ছিল বলে মনে হয়েছে)
৪০০/৮=৫০ টাকা
৫০০ টাকা দিয়ে একটা মাঝারি সাইজের ইলিশ নিয়েছিলাম,সাথে আরো দুই পিস এক্সট্রা নিয়েছি, ভর্তা নিয়েছিলাম আলু এবং বেগুন ভর্তা, লেজ+ডিম ভর্তা ওরা বানিয়ে দিবে-সব মিলে মাওয়া ঘাটে আমাদের খাওয়া দাওয়াতে বিল এসেছিলো ১২০০/-
তাহলে পার পার্সন ১২০০/৮= ১৫০ টাকা
এখানে একটা জিনিস খেয়াল রাখবেন যে,অনেক সময়ই অরিজিনাল পদ্মার ইলিশ দেয়না অথবা কিছু ক্ষেত্রে নকল ইলিশ দেয়ার ঘটনাও ঘটে, তাই মাছ ভালো চিনে এমন কাউকে সাথে নেয়া ভালো, আর ভাত নিবেন প্লেট হিসেবে,ওরা এক গামলা/বোল হিসেবে দিতে চাইলে না করেন,কারণ এক্ষেত্রে অহেতুক বিল বাড়িয়ে দেয়ার সুযোগ থাকে ওদের। এই হলো খাওয়া দাওয়ার পার্ট।
মাওয়া ঘাট- মিরপুর - ১০০ টাকা
সর্বমোট- ৫৭০ টাকা

এছাড়া এক্সটা আমাদের কিছু খরচ ছিলো যেমন গাদিঘাট থেকে আমরা প্রায় তিনশ টাকার নাস্তা+ড্রিংকস কিনে উঠেছিলাম, আপনারা চাইলে বাসা থেকেই কিছু একটা রান্না করে আনতে পারেন,মাওয়াতে চা-সিগারেটে আমাদের এক্সটা খরচ হয়েছে কিছু উপরের খরচে ধরিনি সেটা। বিলে ঘুরতে গেলে এখনই পারফেক্ট সময়, রোদ বৃষ্টি আর মেঘের খেলা দেখতে দেখতে কাটিয়ে দিতে পারেন পারফেক্ট একটা দিন।

বি.দ্র: আড়িয়াল বিলের পানি এতটাই পরিষ্কার যে ওইখানে ময়লা ফেলতে গেলে আপনার নিজেরই খারাপ লাগার কথা,নৌকাতে খাওয়া দাওয়া শেষে চিপসের প্যাকেট,পলিথিন,প্লাস্টিকের বোতল সহ যাবতীয় জিনিস একটা বড় ব্যাগে রেখে ঘোরাঘুরি শেষে গাদিঘাটে এসে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলে দিবেন।নিজের দেশটাকে সুন্দর এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা আমাদেরই দায়িত্ব।


No comments

Powered by Blogger.