বগা লেক ও কেওক্রাডং যাএা
বগা লেক ও কেওক্রাডং যাএা
জগন্নাথ হলের ছাদে বসে প্লান করা। আমরা ৩ বন্ধু আমি, ফয়সাল, উদিত আর একটা ছোট ভাই ধ্রুব এই ৪ জন মিলে প্লান করে ফেলেছি যে যাই হোক না কেন আমরা বান্দরবন যাচ্ছিই। সব সময় প্লান মতো তো আর সব হয় না।
এখানেও ৪ জন থেকে ২ জন তারপর একজন ও না থেকে হয়ে গেলাম ১৩-১৪ জন।
১৩ তারিখ রাতে সাড়ে ১১ টার বাসে রওনা হলাম সেই মেঘের দেশে হওয়ায় ভাসতে। বান্দরবন পৌঁছালাম সকাল ৯টায়, নাস্তা সেরেই রুমার দিকে যাওয়ার বাস স্টপ এ এসে সবাই হাজির। ৩-৪ জন ছাড়া আমরা বাকি সবাই উঠে পড়লাম বাসের ছাদে। রুমা বাজার পর্যন্ত যেতে সাড়ে ৩ ঘন্টার মতো লাগেছে পুরোটা সময় আমরা ছাদে হেলে-দুলে গলা ছেড়ে গান গেয়ে কাটিয়ে দিলাম। রুমা বাজারে আমাদের গাইড বেলাল ভাই অপেক্ষা করছিল। দুপুরবেলা খাবার শেষ করে সাইন ইন করে চাঁদের গাড়ি নিয়ে রওনা হলাম কমলা বাজারের উদ্দ্যেশে। কমলা বাজার থেকে বগা লেক ছোট একটা ট্রেক করে যেতে হয় ৪৫ মিনিটের মতো লেগেছে আমাদের। এখন এখানে রাস্তার কাজ চলছে কিছুদিন পর বগা লেক পর্যন্তই গাড়ি যাবে। লেকের চারিপাশ পাহাড়ে ঘেরা। এই লেক নিয়ে একটা গল্প প্রচলিত আছে। অনেক আগে বগা নামক ড্রাগনের মতো একটা জীব এইখানে থাকতো, এটার জন্য এখানকার মানুষ জন নানা অসুবিধায় পড়তো, তো এটাকে মারার উপায় দিয়েছিল এক তান্ত্রিক, তা অনেকটা ছিল এমন যে একটা আস্ত ছাগলের মুখ দিয়ে বর্শা দিয়ে ছাগল মেরে ওই বর্শা দিয়ে হত্যা করতে হবে ওই বগা টিকে। তারপর গ্রামের সবাইকে তা খেতে হবে। বগাটিকে মারার পর ঐ গ্রামের ২ জন তা খায়নি পরের দিন নাকি তারা স্বপ্ন দেখেছিল গ্রামটি ডুবে যাবে তারা সবাই যাতে নিরাপদ যায়গায় চলে যায়। তারা সবাই চলে গিয়েছিল গ্রাম থেকে ঐ গ্রামটি নাকি সম্পূর্ণ তলিয়ে যায় পানিতে, সৃষ্টি হয় লেকের তার নামই এখন বগা লেক। একরাত ছিলাম আমরা বগা লেক। রাতে বিস্কুট পাগলামির কথা মনে রাখার মতো প্রায় ১৫-২০ প্যাকেট বিস্কুট খেয়েছি আমরা ৮ জন। সে রাতের বেস্ট ডায়ালগ : খাবার দাবার অনেক মজারে ভাই। সেই রাতে আমরা ফয়সালের প্রায় প্রত্যেকটা কথায় হেসেছিলাম, তাই ফয়সাল আমাদের জোট এর নাম দিয়েছিল "লেইম জোক্ এসোসিয়েশন "। তারপরদিন ভোর বেলা নাস্তা সেরে রওনা দিয়ে দিলাম কেওক্রাডং এর উদ্দ্যেশে।ফয়সাল খিচুড়ি পারর্সেল নিলো একটা। তারপর প্রায় দু ঘন্টা ট্রেক করার পর আমরা পৌঁছালাম চিংড়ি ঝরণায়, এটা এই পাহাড় সফরে আমাদের জন্য বোনাস। ঝরণার পানিতে মন মতো গোসল করে ঠান্ডা হয়ে, আমরা কয়জন খিচুড়ি খেলাম, আহা অমৃত অমৃত। ঝরণা পেরিয়ে আরো দু ঘন্টার ট্রেকিং।
কেওক্রাডং যখন পৌঁছালাম তখন ও রোদের প্রখরতা ভালোই ছিল। কিছু সময় পর দেখা গেল মেঘের আসল খেলা মুহূর্তের মধ্যেই পুরো পাহাড় জুরে ঠান্ডা থমথমে পরিবেশ তৈরি হল। মেঘ গুলি গ্রাস করে ফেলছিল পাহাড় গুলেকে। কেওক্রাডং পাহাড়টি ব্যাক্তি মালিকানাধীন। এটার মালিক লালা নামক এক ব্যাক্তি। এই পাহাড়ে কাটানো রাত আমার কাটানো অন্যতম রাতের একটি। পরদিন ভোরে বগা লেকের দিকে আবার রওনা হলাম একটু তারাতারি রওনা হলাম কারন রুমা বাজার থেকে বান্দরবন এর শেষ বাস সাড়ে ৩ টায়। একটা রাস্তা বন্ধ আর বিকল্প রাস্তা খুবই খাড়া দেখে আমরা আর্মিদের রিকুয়েস্ট করে ওদের গাড়ি দিয়ে গিয়েছিলাম কমলা বাজার পর্যন্ত। ফটোগ্রাফের দিনেও আমাদের সবাইকে অনেক অটোগ্রাফ দিতে হয়েছে বিভিন্ন আর্মি ক্যাম্পে। ফেরার সময়ও আমরা ঐ কয়জন বাসের ছাদে করে গান, রাজার সাথে আড্ডা আর ফয়সাল সাহেবের observation দেখতে দেখতে চলে আসলাম বান্দরবন। তখন বিকাল গড়িয়ে সন্ধা নামছে, আমাদের সবারই মনে হচ্ছিল আমরা বান্দরবন আবার আসবো, এই রোডটাতে বাসের ছাদে সফরের জন্য হলেও আসবো।
তারপর শ্যামলির রাত ১০ টার গাড়িতে টিকেট কেটে ফিরে এলাম আবার এই যান্ত্রিক শহরে।
(বগা লেক পার নাইট পার পার্সন ভাড়া ১৫০ করে,আর কেওক্রাডং পার নাইট পার পার্সন ৩০০ করে)
খাবার দাবার: বগা লেকে ভাত, ডিম, ভর্তা, সবজি, ডাল ১২০ টাকা। আর কেওক্রাডং এ গরু / খাসি, ভাত, ডাল, ভর্তা দিয়ে খেয়েছিলাম ২০০ টাকা প্যাকেজ।
বান্দরবন থেকে রুমা বাজার ৪২-৪৪ কিলো বাস ভাড়া ১২০ টাকা করে, ছাদে গেলেও same ভাড়া।
রুমা বাজার থেকে কমলা বাজার চাঁদের গাড়ির ভাড়া ২৫০০ টাকা।
গাইড খরচ per day ৬০০ টাকা।।
আমাদের main খরচ হয়েছিল per person ৩৫০০ টাকা।।
মেঘের video টা আমার profile এ আছে কেউ দেখতে চাইলে দেখতে পারেন।।
নোট :
ঘুরতে গিয়ে পরিবেশ দূষণ না করি, পরিবেশ ভালো থাকলে ভালো থাকবো আমরাও।।
(© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি)
No comments